বাংলাদেশ, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫ ইং , ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ রাত ১:৪৮

শিরোনাম

সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না : জামায়াত আমীর শফিকুর রহমান


প্রকাশের সময় :২৪ মে, ২০২৫ ১১:৩৫ : অপরাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার:

রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েকদিনে হঠাৎ যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তা ‘কিছুটা কমেছে’ বলে মনে করছে জামায়াতে ইসলামী।

শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, দুটো রোডম্যাপ হলে বাকি সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে।

এ দুটো রোডম্যাপ বলতে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপের কথা তুলে ধরেন দলটির আমির।

তবে সংস্কারের আগে নির্বাচন করা হলে তাতে জনগণের আশা পূরণ হবে না বলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে তুলে ধরেছে জামায়াতে ইসলামী।

শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন শফিকুর রহমান। বলেন, জনগণের কোনো ভোগান্তি না হয়ে একটি সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কারের দৃশমান বিষয় জনগণের সামনে আসতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কারই এ সরকারের পক্ষে সম্ভব না। পাঁচটি বিষয়ে হাত দিয়েছে। সেগুলো দৃশ্যমান হতে হবে।

তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় বেঁধে না দেওয়ার কথা তুলে ধরে শফিকুর বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে পারে বলে তারা মনে করেন। এরপর রোজা। তখন ভোট করার পরিবেশ থাকবে না। এরপর সময় টেনে লম্বা করার দরকার নেই।

হঠাৎ পাল্টে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুহাম্মদ ইউনূস।

বিএনপির পর শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জামায়াতের দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, যা শেষ হয় রাত সাড়ে ৯টার দিকে।

বৈঠকে জামায়াত আমিরের সঙ্গে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ উপস্থিত ছিলেন।

এ বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে জামায়াতের নায়েবে আমির তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেশের সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ করতে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করতে এসেছি।’’

এর আগে রাত পৌনে ৮টায় খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।

জামায়াতের পর রাতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বসবেন ইউনূস।

ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য, বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মতভিন্নতা; সেই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের ভাবনা’– সব কিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে তৈরি হওয়া অস্থিরতার মধ্যে এসব বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান।

এ দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় রোববারও কয়েকটি দলের সঙ্গে বসবেন তিনি। শনিবার ব্কিালে অন্য কিছু দলের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলেও ওই সময় দলগুলোর নাম ঠিক হয়নি।

জাতীয় নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই ঘোষণা, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য চলছিল।

তার আগে ‘মব’ সৃষ্টি করে বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতির মত ঘটনাতেও সরকার সমালোচিত হয়েছে।

দাবি আদায়ের মিছিলগুলো দিনে দিনে যমুনায় সরকারপ্রধানের বাসভবনের দরজায় কড়া নাড়ছিল। যমুনার সীমানা দেয়ালের কাছাকাছি স্থানে সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ চলেছে দিনরাত।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ইউনূসের ‘পদত্যাগের ভাবনা’ সামনে এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ তোলেন, দেশে আরেকটি এক-এগারোর পাঁয়তারা চলছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসনেকে শপথ পড়ানোর দাবিকে ঘিরে আন্দোলনের মধ্যে সরকারের তিন উপদেষ্টা- ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আসিফ নজরুলের পদত্যাগের দাবি তোলে এনসিপি।

অন্যদিকে দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পাশাপাশি ইউনূসের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলে বিএনপি।

জুলাই আন্দোলনের ‘প্রধান শরিকদের’ এমন বিরোধের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা।

ট্যাগ :