
শতাধিক পরিবারের জীবিকা এখন ঝুঁকির মুখে, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি কারিগরদের।
দিনাজপুর থেকে বিশেষ প্রতিবেদনঃ—
একসময় উৎসবের বারতা নিয়ে আসত দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাটিয়ান ও নলদিঘী গ্রামের প্রতিটি বাড়ি। এ অঞ্চলে নলদিঘী পরিচিত ছিল ঝুড়ির মোয়া তৈরির গ্রাম নামে। কিন্তু নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম, উৎপাদন খরচের ঊর্ধ্বগতি এবং তুলনামূলকভাবে কম লাভের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই ঝুড়ির মোয়া শিল্প আজ চরম সংকটে। বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা এই পেশা ছেড়ে জীবনধারণের জন্য অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন শতাধিক পরিবার।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধামইড় ইউপির মাটিয়ান এবং ফরক্কবাদ ইউপির নলদিঘী এই দুটি গ্রামের বহু পরিবারের প্রধান কাজ ও আয়ের উৎস এই ঝুড়ির মোয়া তৈরি ও বাজারজাত করা। এ কাজে পরিবারের নারী-পুরুষ সকলে একযোগে অংশ নেন।
বিক্রেতা মো. শাহীন আলম জানান, হাতে তৈরি কাঠের ঝরনা মেশিন, আতপ চালের আটা, তেল, গুড়, কড়াই, পাতিল ও খড়ি ব্যবহার করে প্রথমে আটা সিদ্ধ করে খামির বানানো হয়। এরপর তা সংমিশ্রণ করে কাঠের মেশিন বা হাতের সাহায্যে চিকন সিমাইয়ের মতো ঝুড়ি তৈরি করা হয়। রোদে শুকিয়ে বালুতে মুড়ির মতো ভেজে নেওয়া ঝুড়িগুলো গুড়ের বা চিনির সিরায় মেখে ছোট ছোট গোল মোয়া বা নাড়ু তৈরি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ার বিপরীতে যে মুনাফা আসছে, তা দিয়ে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
কারিগর আব্দুল আজীম জানান, মোয়া তৈরির প্রধান কাঁচামাল আতপ চালের আটা, গুড় ও তেলের দাম বিগত বছরগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। অথচ বাজারে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে উৎপাদিত মোয়ার দাম সেই অনুপাতে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
কারিগররা আরও বলেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে, কিন্তু সে অনুযায়ী লাভ হচ্ছে না। যা লাভ হয়, তা দিয়ে পরিবার পরিজনের অন্ন সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে এখনও বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার কারণে এই পেশা ছাড়তে পারেননি, কিন্তু কালের বিবর্তনে এই গ্রামীণ ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
সংকটে পড়া এসব পরিবার তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা টিকিয়ে রাখতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
বিক্রেতা ও কারিগররা জোরালোভাবে বলেন, এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুবই প্রয়োজন। সহজ শর্তে ঋণ, কাঁচামাল সংগ্রহের সহায়তা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা পেলে এই শতাধিক পরিবার এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি রক্ষা পাবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, অচিরেই বিরলের ঐতিহ্যবাহী ঝুড়ির মোয়া শিল্পটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
























