বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং , ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ রাত ৪:২৩

ইসলামী ঐতিহ্যের সাক্ষী চীনের প্রাচীন হুয়াইশেং মসজিদ


প্রকাশের সময় :১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ৩:১২ : অপরাহ্ণ

ধর্ম ডেস্ক:

বিশ্বের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম চীনের গুয়াংজু শহরে অবস্থিত হুয়াইশেং মসজিদ। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টীয় ৬২৭ সালে মক্কা বিজয়ের কয়েক বছর পর মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। তাং রাজবংশের আমলে গড়ে ওঠা এই মসজিদ ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এক অনন্য নিদর্শন।

চীনে মসজিদকে বলা হয় চিং ঝেন সি, অর্থাৎ পবিত্র সত্যের মন্দির। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয় হুই হুই সি। হুই জনগোষ্ঠীর উপাসনালয়কে লি বাই সি বলা হয়। যার অর্থ, ইবাদতের স্থান, কিংবা চিং জিং সি, যার মানে পবিত্র ও নির্মল মসজিদ।

ইসলামের আগমন ও গুয়াংজুর ভূমিকা

তাং রাজবংশের (৬১৯–৯০৭) সময় সিল্ক রুট ধরে মুসলিম বণিকেরা চীনে আসা শুরু করেন, এর মাধ্যমে চীন অঞ্চলের সঙ্গে ইসলামের প্রথম পরিচয় ঘটে। সেই সময় গুয়াংজুই হয়ে ওঠে ইসলামী সভ্যতার প্রবেশদ্বার। একে তাই বলা হয় চীনা ইসলামের আঁতুড়ঘর।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ৬৭২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবি সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) হুয়াইশেং মসজিদটি নির্মাণ করেন। সম্রাট গাওজং (৬৪৯–৬৮৩)–এর রাজত্বকালে নির্মিত এই মসজিদের ভেতরে আজও দেখা যায় নান্দনিক আরবি ক্যালিগ্রাফি।

শতাব্দী পেরিয়ে টিকে থাকা স্থাপনা

শুধু চীন নয় বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি হুয়াইশেং মসজিদ। ১৩৫০ সালে ইউয়ান রাজবংশের সময়ে এবং পরে ১৬৯৫ সালে কিং রাজবংশের সম্রাট কাংজির আমলে আগুনে পুড়ে যায় মসজিদটি। পরবর্তীতে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এর বিখ্যাত মিনার— হুয়াইশেং লাইট টাওয়ার— আগেই নির্মিত হয়েছে।

চীনা স্থানীয় নকশা ও ইসলামী শৈলীর চমৎকার মিশ্রণে নির্মিত হয়েছে মসজিদটি। মসজিদের প্রবেশপথে একটি করিডোর রয়েছে, গাছপালা ঘেরা আঙিনা পার হয়ে মূল নামাজঘরে পৌঁছাতে হয়।

মিনার

হুয়াইশেং মসজিদের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দিক হলো ৩৬ মিটার উঁচু মিনারটি। এটি গুয়াংটা বা ‘প্লেইন প্যাগোডা’ নামে পরিচিত। বাইরের অংশে কোনো অলংকার নেই বলেই এ নাম রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে একে লাইট হাউস বা বাতিঘরও বলা হয়, কারণ এটি একসময় ঝুজিয়াং নদীপথে আগত নাবিকদের জন্য দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করত।

এই মিনারের ভেতরে রয়েছে পাকানো সিঁড়ি ও উপরে একটি বেলকনি আছে। এখানে উঠে মুয়াজ্জিনরা আজান দিতেন। ১০ মিটার ভিত্তির ওপর নির্মিত এই ইটের মিনারটি সাধারণ চীনা প্যাগোডা স্থাপত্যের থেকে আলাদা।

রাজকীয় স্বীকৃতি

১৯০১ সালে মসজিদটিকে একটি সম্মানসূচক ফলক প্রদান করেন কিং রাজবংশের সম্রাট গুয়াংশু, এতে লেখা ছিল—‘জিয়াও চং শি ইউ’ অর্থাৎ ‘ইসলাম এসেছে পশ্চিম মক্কা থেকে’। কথিত আছে, এই চারটি শব্দ স্বয়ং সম্রাজ্ঞী সিসি লিখেছিলেন।

বর্তমানে হুয়াইশেং মসজিদ

৩,৬০০ বর্গমিটার আয়তনের এই মসজিদে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে প্রায় ২ হাজার মুসল্লি অংশ নেন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও জামাতে আদায় করা হয় এখানে। 

মসজিদের অভ্যন্তরে একদিকে চীনা ঐতিহ্যবাহী ছাদ ও কাঠের কাজ, অন্যদিকে ইসলামী নকশার সৌন্দর্য— এক অনন্য সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে।

মসজিদ কমপ্লেক্সে প্যাগোডা শৈলীতে নির্মিত হয়েছে, ইমামের কক্ষ, ধর্মীয় শিলালিপি সংরক্ষণের জন্য ট্যাবলেট প্যাভিলিয়ন এবং অজুখানা।

ট্যাগ :