বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং , ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ রাত ৪:১৭

চট্টগ্রামে দু’পুলিশ কর্মকর্তার একবছর : আহসান হাবিব পলাশ ও হাসিব আজিজ পুলিশে দুই বন্ধুর সাফল্যের আলোকছটা


প্রকাশের সময় :৬ অক্টোবর, ২০২৫ ৪:২২ : অপরাহ্ণ

মো. কামাল উদ্দিন:

সময় দ্রুত বয়ে যায়, কিন্তু কিছু সময় ইতিহাস হয়ে যায়। আজ থেকে এক বছর আগে, চট্টগ্রামের মানুষ যে আনন্দের সংবাদ পেয়েছিল, সেটি ছিল দুই যোগ্য পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের খবর। ১৫তম বিসিএস ব্যাচের দুই মেধাবী ও নীতিবান অফিসার—চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ—চট্টগ্রামের নেতৃত্বে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এই এক বছরে তাঁরা শুধু দায়িত্বই পালন করেননি, বরং প্রমাণ করেছেন—সততা, পেশাদারিত্ব ও মেধা দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া যায়। বঞ্চনা থেকে সাফল্যের শিখরে- দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চনার শিকার ছিলেন এই দুই অফিসার। তাঁরা ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস ব্যাচে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন—কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব আর বৈষম্যমূলক নীতির কারণে তাঁদের পদোন্নতি স্থবির হয়ে ছিল বহু বছর। যেখানে তাঁদের জুনিয়ররা একের পর এক ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপি পদে পৌঁছে গেছেন, সেখানে তাঁরা অবহেলিত থেকেছেন—কারণ তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না; তাঁরা ছিলেন শুধু নীতিবান, পেশাদার, জনগণের পুলিশ। কিন্তু ইতিহাস শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার করে। অস্থায়ী সরকারের সময়ে তাঁদের যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। হাসিব আজিজ ও আহসান হাবিব পলাশ—দুজনেই আজ অতিরিক্ত আইজিপি (Addl. IGP) পদে উন্নীত হয়েছেন। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, সৎ থাকা কখনও ক্ষতির কারণ হয় না—যদি কেউ নিজের অবস্থান অটল রাখে, তবে সময় একদিন তার প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়। চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলায় এক নতুন দিগন্ত-চট্টগ্রাম, এই ঐতিহ্যবাহী বন্দরনগরী, সবসময়ই জটিল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মুখোমুখি থাকে—মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন ধরেই বড় চ্যালেঞ্জ। এক বছর আগে যখন হাসিব আজিজ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন, তাঁর সামনে ছিল অগণিত চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আজ এক বছর পর বলা যায়—তিনি চট্টগ্রামকে এক নতুন পথে নিয়ে গেছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মপরিবেশে এসেছে শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও সেবামুখী মনোভাব। পুলিশের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা সাধারণ মানুষকেও আস্থা দিয়েছে। অপরাধ দমন থেকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা—সবক্ষেত্রেই দেখা গেছে তাঁর দক্ষ নেতৃত্বের ছাপ। অন্যদিকে, ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ চট্টগ্রাম রেঞ্জে দায়িত্ব নেওয়ার পর জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। পাহাড়ি এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, অবৈধ অস্ত্র, এমনকি গ্রামীণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাঁর কৌশল ও তদারকি প্রশংসিত হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে তাঁদের মধ্যে “জনবান্ধব পুলিশিং”-এর ধারণা পুনঃস্থাপন করেছেন। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার- বিগত সরকার আমলে পুলিশ বাহিনী এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কবলে পড়েছিল। তখন জনগণ ও পুলিশের মধ্যে যে আস্থাহীনতার দেয়াল তৈরি হয়েছিল, তা ভাঙা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু হাসিব আজিজ ও আহসান হাবিব পলাশ এক বছরের মধ্যেই সেই আস্থার সেতু গড়ে তুলতে পেরেছেন। আজ চট্টগ্রামের মানুষ পুলিশকে আর ভয়ের চোখে নয়, বরং আশ্রয় ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে দেখছে। থানায় গিয়ে মানুষ সহযোগিতা পাচ্ছে, অভিযোগ নিতে কর্মকর্তারা আন্তরিক হচ্ছেন—এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় পরিবর্তনের প্রতীক। দুই বন্ধুর বন্ধন, একটি অনুপ্রেরণার গল্প- হাসিব আজিজ ও আহসান হাবিব পলাশ—দুজনই সহপাঠী, সহযোদ্ধা, সহমর্মী। তাঁদের বন্ধুত্ব পেশাগত সীমা ছাড়িয়ে গেছে দায়িত্ববোধে। তাঁরা জানেন, পুলিশ বাহিনীর ভেতরের বঞ্চনার কষ্ট কতটা গভীর। তাই আজ তাঁরা নেতৃত্বে এসে সেই অন্যায়ের প্রতিকার করতে চান—যোগ্য অফিসারদের ন্যায্য মর্যাদা দিতে চান, আর পুলিশ বাহিনীকে দলমুক্ত ও জনবান্ধব করে তুলতে চান। এক বছর পর চট্টগ্রামের চিত্র- চট্টগ্রামে অপরাধের হার কমেছে, ট্রাফিক ব্যবস্থায় এসেছে শৃঙ্খলা, মাদকবিরোধী অভিযানে সাফল্য দৃশ্যমান। পুলিশের সেবার মান বেড়েছে, আর সাধারণ মানুষও পুলিশের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে। হাসিব আজিজের দপ্তর আজ এক নতুন দৃষ্টান্ত—অফিসে নয়, মাঠে কাজ করার মধ্যে বিশ্বাস। ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশও নিয়মিত মাঠে যান, স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁদের এই তদারকি ও আন্তরিকতা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। চট্টগ্রামের পুলিশ নেতৃত্বে এই দুই অফিসারের উপস্থিতি আজ এক আশার প্রতীক। তাঁরা দেখিয়েছেন—দল নয়, দেশই বড়। তোষামোদ নয়, সততাই সফলতার চাবিকাঠি। এক বছর আগের যে দুই বন্ধু পদোন্নতি-বঞ্চিত ছিলেন, আজ তাঁরা অতিরিক্ত আইজিপি হয়ে দেশের গৌরবময় বাহিনীকে মানবিকতার পথে ফিরিয়ে আনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের এই সাফল্য শুধু চট্টগ্রামের নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর জন্য এক প্রেরণার গল্প। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম হবে দেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, জনবান্ধব ও নিরাপদ নগরী।সালাম ও শুভেচ্ছা—জনবান্ধব পুলিশিংয়ের পথিকৃৎ দুই বন্ধু, অতিরিক্ত আইজিপি হাসিব আজিজ ও আহসান হাবিব পলাশকে।

লেখক:

সিনিয়র সাংবাদিক মো: কামাল উদ্দিন
বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক ও গবেষক।

ট্যাগ :