আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এ পর্যন্ত রেকর্ড ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক নদী সরস্বতীর মিলনস্থল ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিয়েছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশগুলোর অন্যতম ভারতের মহা কুম্ভমেলা বুধবার শেষ হচ্ছে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী এদিন শিবরাত্রিতে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে পবিত্র স্নানের মধ্য দিয়ে ৪৫ দিন ধরে চলা এ মহামেলা শেষ হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ভারতীয় সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে আসা রেকর্ড ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক নদী সরস্বতীর মিলনস্থল ত্রিবেণী সঙ্গমে ‘পবিত্র’ ডুব দিয়েছেন।
শেষ দিনের স্নান নির্বিঘ্ন করতে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। চূড়ান্ত ‘অমৃত স্নান’ এর জন্য ভোররাত থেকেই মানুষ গঙ্গার ত্রিবেণী সঙ্গমে নামা শুরু করে। এই স্নানে যোগ দিতে সোমবার থেকেই লোকজন মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করে।
প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়নী ও নাশিক- ভারতের এই চার শহরে তিন বছর পর পর ঘুরে ঘুরে কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। এভাবে প্রতি ১২ বছর পর যে মেলা হয় তাতে ‘মহা’ শব্দটি যোগ হয়ে তা ‘মহা কুম্ভমেলা’য় পরিণত হয়। এই মহা কুম্ভমেলায়ই সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয়।
১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলায় ২৯ জানুয়ারি মৌনি অমাবস্যার দিন প্রচুর লোকের ভিড়ে এক পদদলনের ঘটনায় অন্তত ৩৬ জন নিহত ও ৬০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে উত্তর প্রদেশ সরকার ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পাশাপাশি নিরাপত্তা, পরিবহন, জরুরি সাড়া, পয়নিষ্কাশন, জঞ্জাল সাফাইসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পদদলনের ঘটনায় বিরোধীদলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলায় এ নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদ শুরু হয়। ফলে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য কেন্দ্রীয় ও উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার কঠোর, কঠিন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
আরেকটি বিতর্ক জন্ম দিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের (সিপিসিবি) একটি রিপোর্ট। এতে বলা হয়েছে, গঙ্গার ত্রিবেণী সঙ্গমের পানি মানুষের মলমূত্রে থাকা জীবাণু ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া ভরতি, এই পানি স্নানের উপযুক্ত না। উত্তর প্রদেশের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর সমালোচনা করেছেন।
হিন্দুদের সবচেয়ে প্রাচীণ পুরাণ ঋগ্বেদে প্রথম কুম্ভের উল্লেখ পাওয়া যায়। কুম্ভ অর্থ কলস। ঋগ্বেদে থাকা গল্পটিতে বলা হয়েছে, মহাজাগতিক সমুদ্র মন্থনের মাধ্যমে তুলে আনা অমৃত একটি কলসের মধ্যে ছিল, দেবতা ও অসুররা সেটি দখলে নেওয়ার জন্য লড়াই করার সময় উপচে কয়েক ফোঁটা অমৃত পৃথিবীতে পড়ে যায়।
অমৃতের ওই ফোঁটাগুলো পড়েছিল ভারতের প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়নী ও নাশিকে। নক্ষত্রের অনুকূল অবস্থান অনুযায়ী বিশেষ দিনগুলোতে এই চার জায়গায় নদীতে স্নান করলে ওই অমৃতের প্রভাবে সব পাপ, শোক ও জরা ধুয়ে যায় বলে বিশ্বাস হিন্দুদের। এই স্নানকে কেন্দ্র করেই কুম্ভমেলার উৎপত্তি।